পাঠ্য বইয়ের চেয়েও মহার্ঘ নরকঙ্কাল, দাম ৭০ হাজার!
অ্যানাটমির ক্লাসে ডাক্তারি পড়ুয়াদের কঙ্কাল দেখেই শিখতে হয়
1.
‘এখানে নরকঙ্কাল বিক্রয় হয়!’ অথবা ‘হিউম্যান স্কেলিটন সেল হিয়ার।’ বাম আমলে সেন্ট্রাল অ্যভিনিউয়ের একটি ডাক্তারি বইপত্রের দোকানে এমনই একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল পড়ুয়াদের স্বার্থে। কিন্তু বিধি বাম। কয়েকঘণ্টার মধ্যে পুলিশ এসে বন্ধ করে দেয়। কারণ, মানবদেহের কোনও অঙ্গ বিক্রি আইনত দণ্ডণীয়। ফলে সেখানেই শুরু আর সেখানেই শেষ।
কিন্তু তাই বলে কি ডাক্তারির পড়ুয়ারা কঙ্কাল পায় না? ফি বছর রাজ্যে গড়ে ৬ হাজার এমবিবিএস পাস করে। তাঁরা কোথা থেকে কঙ্কাল পায়? সামনের মাস থেকেই এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। অ্যানাটমির ক্লাসে পড়ুয়াদের কঙ্কাল নিয়ে আসতেই হবে। মুখস্থ করতে হবে ২০৬টি হাড়ের নাম। কোন হাড়ের মধ্যে চুলের মতো হালকা চিড় থাকে? অথবা কোমরের কোন হাড় গোটা শরীরে ভার বহন করে? অথবা গোড়ালির কোন হাড়ের জন্য বুক ধড়ফড়ানি বাড়ে-কমে। এমন অসংখ্য বিষয় পাখি পড়ার মতো শিখতে হয়। বস্তুত, ডাক্তারি পড়ুয়ার কাছে একটি কঙ্কাল মানে পাঠ্য বই।
তবে কঙ্কাল কে দেবে? উত্তর আছে হাসপাতালের ডোমের কাছে। ভাগ্য ভালো থাকলে সিনিয়রদের থেকে পাওয়া যায়। আর তা না হলে বিপদতারণ ‘ডোম’। মর্গের সামনেই ঘুর ঘুর করলে চলে আসে ‘চিরকুট’। ভিতরে ফোন নম্বর। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার কথায়, দিন কয়েক ঘোরাঘুরির পর ফোন নম্বর পাওয়া গেল। কলেজ থেকে অনেক দূরে হাওড়ায় যেতে হল। প্রায় ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে তবেই গোটা কঙ্কাল পেয়েছি। বস্তায় বেঁধে সোজা বাড়ি। এই বছর সেই ‘মহার্ঘ কঙ্কালের দাম উঠেছে গড়ে ৭০ হাজার টাকা। অন্তত এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের মর্গে শনিবার এমনই দামদস্তুর চলেছে। অ্যানাটমির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা.সুদেষ্ণা মজুমদার বলেছেন, ‘‘কঙ্কাল পাওয়া যায় ডোমের কাছে। কোনও পড়ুয়ার দরকার হলে আমি সাহায্য করি।’’
What's Your Reaction?