মধু সংগ্রহে বেরোলো সুন্দরবনের পুরুষেরা
সুন্দরবনে শুরু হলো মধু সংগ্রহ, স্বামী ও পুত্ররা জঙ্গলে যাবে মধু সংগ্রহের কাজে। যাতে তাদের স্বামীরা জীবিত ভাবে বা অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে তার জন্য আজ তারা জঙ্গলে বাড়ি থেকে জঙ্গলে উদ্দেশ্যে যাবার আগে প্রত্যেক স্ত্রী এরা রংচংয়ের শাড়ি ও সিঁদুর পরে তাদেরকে বিদায় জানায়। তবে মধু সংগ্রহের কাজের জন্য গেছেন সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে। দু বেলা স্বামীর মঙ্গলকামনায় বনবিবির থানে ফুল ও ডালা দিয়ে পুজো চড়াচ্ছেন। নিরামিষ আহারও করছেন। দু সপ্তাহ পরে মধু সংগ্রহ করে স্বামী বাড়ি ফিরবেন। স্বামী যাতে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে আসেন সেই কামনার জন্য বনবিবির কাছে দিনরাত ধরে প্রর্থনা। এটাই রীতি সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে যাওয়া মৌউলে পরিবারদের। কুলতলির দেউল বাড়ির নাইয়াপাড়া এলাকার নদী বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে জঙ্গলের দিকে চেয়ে এমন কথাই শোনালেন সুন্দরবনে মৌউলের পরিবারের বধূরা । সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে জানান হয়েছে, এবছর ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রকল্পের কুলতলির রায়দিঘি রেঞ্জ কার্যালয় থেকে মৌউলেদের প্রয়োজনীয় অনুমতি পত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জঙ্গলে মধু সংগ্রহের কাজ আজ বেরিয়ে পড়েছেন। রায়দিঘি রেঞ্জ কার্যালয় থেকে ভয় থেকে দশজনার টিম নিয়ে সর্বমোট ৯০ জন সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের পথে রওনা হয়েছে। এবছর সরকার নির্ধারিত মধুর দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি। আর মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে ১১টন। সুন্দরবনে এই সময় বাইন, গর্জন, খলসে প্রভৃতি গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আর তা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে চাকে মজুত করছে। এই মধুর খ্যাতি জগৎ জোড়া। সুন্দরবনে প্রতিটি মধু সংগ্রহকারি দলে থাকেন ৬ থেকে ১০ জন করে মৌউলে। তাঁরা জঙ্গলে নেমে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন। মৌচাক দেখতে পেলেই বিশেষ আওয়াজ করে সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করেন। তারপর আগুনের ধোঁয়া দিয়ে মধু সংগ্রহের কাজ চলে। এক একটা চাক থেকে প্রায় ২০–২৫ কিলো মধু সংগ্রহ করা হয়। তারা বাঘকে বোকা বানানোর জন্য বিশেষ ধরনের মুখোশও পড়ে থাকেন। বন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান এই বছরে মৌলেরা যথেষ্ট পরিমাণে মধু পাবেন আশা করেন এবং মধু সংগ্রহ করে বন দপ্তরে জমা দিয়ে টাকা নেবেন। প্রতি বছর এই মধু সংগ্রহের সময় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়ে। সেই কারণে পুলিশ প্রশাসন ও বনদপ্তরের উদ্যোগে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয় সুন্দরবন জঙ্গল এর বিভিন্ন দিকে। এমনকি বাঘ ও জল দস্যুদের আক্রমনে মারা গেলে সেই মৌলেদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় প্রশাসন এর পক্ষ থেকে। @ubanglatvofficial #sundarban #south24pargananews
What's Your Reaction?