South24 PGS : অলিম্পিকে জোড়া পদকজয়ীর দিন কাটছে অনটনে | U Bangla TV

South24 PGS : অলিম্পিকে জোড়া পদকজয়ীর দিন কাটছে অনটনে | U Bangla TV

Dec 5, 2023 - 16:30
 0  5

 মানসিক প্রতিবন্ধকতায় পড়াশোনা এগোয়নি। আঁকড়ে ধরেন খেলাধূলাকে। সেই খেলায় চূড়ান্ত স্তরে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। গ্রিসে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিক থেকে এনেছেন জোড়া পদক। ভেবেছিলেন, খেলাধূলা হয়ত জীবনে উপার্জনের রাস্তা খুলে দেবে, মিলবে সরকারি চাকরি। কিন্তু তা হয়নি। অলিম্পিকে জোড়া রুপো জিতেও নূন্যতম সরকারি সাহায্যটুকুও মেলেনি জয়নগরের পুলক রায়ের। বর্তমানে ভাঙাচোরা একতলা ঘরে অশীতিপর মা ও মানসিক প্রতিবন্ধী দিদির সঙ্গে অভাব আর চূড়ান্ত আর্থিক অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে বছর চল্লিশের দৌড়বিদের।জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের রায়পাড়ার বাসিন্দা পুলক। ছোট থেকেই মানসিক বিকাশে সমস্যা রয়েছে তাঁর। তাঁর এক দিদিরও একই সমস্যা। ছেলে-মেয়ের এই মানসিক পরিস্থিতিতে তাঁদের খেলাধূলায় ব্যস্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেন বাবা-মা। দৌড়ে আগ্রহ ছিল দু’জনেরই। পাড়ার মাঠে স্থানীয় কোচের কাছে শুরু হয় তাঁদের দৌড় প্রশিক্ষণ। সেখান থেকে ক্রমশ বড় শহর হয়ে কলকাতার এক ক্লাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তাঁরা। শুরু হয় এক স্বপ্নের উড়ান। ক্রমশ জেলা, রাজ্য স্তরে মানসিক প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পরপর সাফল্য পান দুই ভাই-বোন। জেতেন প্রচুর পদক। ধীরে ধীরে পুলক জাতীয় স্তরেও নিজেকে প্রমাণ করেন। জাতীয় স্তরে পরপর সোনা জিতে ২০১১ সালে গ্রিসের আথেন্সে অনুষ্ঠিত মানসিক প্রতিবন্ধীদের স্পেশাল অলিম্পিকে যাওয়ার ছাড়পত্র জোগাড় করে নেন। সেই অলিম্পিকে ৮০০ মিটার ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে রুপো জিতে শেষ করেন তিনি।পুলকের বাবা একটি দোকানে কাজ করতেন। মা গৃহবধূ। সংসারে আর্থিক সমস্যা ছিলই। তা সত্ত্বেও মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা ছেলে-মেয়েকে জয়নগরের বাড়ি থেকে কলকাতায় নিয়মিত প্রশিক্ষণে নিয়ে যেতেন বাবা-মা। ছেলের সাফল্যের পর তাঁরা ভেবেছিলেন সুদিন আসবে। কিন্তু তা হয়নি। পুলকের মা দুর্গা রায় জানান, জিতে আসার পর ক’দিন খুব হই-চই হয়। কলকাতার বড় হলে ডেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পাশে থাকার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। কিন্তু স্থানীয় পুরসভার তরফে হাজার পাঁচেক টাকা আর্থিক সাহায্য ছাড়া সেভাবে আর কিছুই মেলেনি। খেলাধূলায় সাফল্য পেলে চাকরি মেলে বলে শুনেছেন তাঁরা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই পাননি পুলক। বর্তমানে পুলকের বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। ছেলেবেলায় খোলাধূলার পাশাপাশি আঁকা শিখেছিলেন কিছু দিন। সেই বিদ্যেকে সম্বল করে পাড়ার দু’-একটি ছেলেমেয়েকে আঁকা শিখিয়ে সামান্য রোজগার করেন।দুর্গাদেবীর বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। স্বামী মারা গিয়েছেন। দুই মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভাঙাচোরা একতলা বাড়িতে থাকেন অসুস্থ বৃদ্ধা। তাঁর আরও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছেন। তাঁরা অন্যত্র থাকেন। তাঁদের আর্থিক সাহায্যেই কোনওরকমে চলে পরিবারটির। তিনি বলেন, “অনেক আশা নিয়ে ছেলে-মেয়েকে খেলাধূলা শিখিয়েছিলাম। টানা ২২ বছর নিয়মিত ওদের নিয়ে জয়নগর থেকে কলকাতায় গিয়েছি প্রশিক্ষণে। ভেবেছিলাম খেলাধূলা করে যদি কিছু হয়। ছেলেটা অলিম্পিক থেকে জিতে এল। কত হই চই হল। কিন্তু কিছুই তো পেল না। এখন কোনওরকমে দিন কাটে। আমি না থাকলে ছেলে-মেয়ে দুটোর কী হবে জানি না। হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। সরকার তো দুঃস্থ ক্রীড়াবিদদের সাহায্য করে শুনেছি। সেটাও যদি দেয়, ভবিষ্যতে খাওয়া-পড়ার চিন্তাটা থাকে না।”পুলক বলেন, “বাবা মারা গেলেন, মাও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সেই কারণে আর খেলাধূলা এগোয়নি। তবুনাহলে হয়ত আরও একটা অলিম্পিকে নামতে পারতাম। এখন ছবি আঁকাই। কোনওরকমে হাতখরচটা জোগাড় হয়। পাড়ার মাঠে প্র্যাকটিসটা রোজ করি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow